ডেভেলপারদের নিত্যদিনের সঙ্গী মার্কডাউন

ডেভেলপারদের নিত্যদিনের সঙ্গী মার্কডাউন

আপনি যদি একজন ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি জানে যে, গিট বা গিটহাব কি জিনিস। সংক্ষেপে এটা একটি ভার্সন কন্ট্রোলিং সিস্টেম। যখন আমরা কোন প্রোজেক্ট গিটহাবে ভার্সন কন্ট্রোল করি তখন প্রত্যেকটা রিপোজিটোরিতে একটা কমন ফাইল থাকে যার নাম README.md। README.md ফাইলে মূলত প্রোজেক্ট এর একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকে, যেমনঃ প্রোজেক্ট কেন করা হয়েছে, কি কি টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে, কিভাবে ইন্সটল করতে হবে, ডেমো লিঙ্ক ইত্যাদি। আর এগুলোকে যদি আপনি নিজের মত করে ফরম্যাটিং করতে চান যেমনঃ টাইটেল বানানো, লেখা বোল্ড করা, লিঙ্ক করা, ইমেজ দেখানো ইত্যাদি, তাহলে আপনাকে অবশ্যই মার্কডাউন সম্পর্কে জানতে হবে।

আবার আপনি যদি আপনার গিটহাব প্রোফাইল পেইজ টা পিন করা রিপোজিটোরির পরিবর্তে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে চান, সুন্দর একটা প্রোফাইল রিডমি তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই মার্কডাউন ভালো ভাবে জানতে হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে আমরা মার্কডাউন শেখা শুরু করি।

মার্কডাউন কিঃ

মার্কডাউন হল একটি লাইটওয়েট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ যার মাধ্যমে লেখাকে ফরম্যাটিং করা হয়। বর্তমান সময়ে এটি খুবই জনপ্রিয় মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ।

জনপ্রিয় ওয়েবসাইট যেমনঃ GitHub, Reddit, Dev.to মার্কডাউন সাপোর্ট করে। গিটহাব সম্পর্কে আমি ইতিমধ্যে বলেছি। Dev.to হল ডেভেলপার কমিউনিটি, এখানে আপনি চাইলেই টেক ব্লগ লিখতে পারেন তবে আপনাকে এখানে লেখার জন্য মার্কডাউন জানা থাকলে আপনার খুবই সুবিধা হবে। আরেকটা বিষয় না বললেই নয় সেইটা হলঃ আপনি এখন যে প্লাটফর্ম এ লেখাটি পড়ছেন, হা আপনি ঠিক ধরেছেন আমি টেকডাইরির কথা বলছি এখানে ব্লগ লেখার জন্য যে এডিটর ব্যবহার করা হয়েছে এটিও মার্কডাউন সাপোর্ট করে আর আমি এখন এই সুবিধাটি ব্যবহার করেই লিখছি 😊।

কেন মার্কডাউন ব্যবহার করবেন?

WYSIWYG এডিটর এর পরিবর্তে মার্কডাউন সাপোর্ট করে এমন এডিটর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। আপনি হয়তো ভাবছেন কেন সবাই WYSIWYG এডিটর এর পরিবর্তে মার্কডাউন ব্যবহার করে, এটার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। চলুন আমরা কারণগুলো দেখিঃ

মার্কডাউন এখন প্রায় সব জায়গাই ব্যাবহৃত হচ্ছে। মার্কডাউন ব্যবহার করে অনেক কিছু তৈরি করা হচ্ছে যেমনঃ ওয়েবসাইট, ডকুমেন্ট, নোট, বই, প্রেজেন্টেশান, ইমেইল মেসেজ এবং টেক ডকুমেন্ট।
মার্কডাউন পোর্টেবল এবং মার্কডাউনে ফরম্যাট করা টেক্সট ভার্চুয়ালি যেকোনো অ্যাপ্লিকেশানে ওপেন করা যায়।
আপনি যেকোনো ডিভাইসে অথবা অপারেটিং সিস্টেমে মার্কডাউন তৈরি করতে পারবেন।
আপনি ভবিষ্যতে যদি এমন সিদ্ধান্ত নেন যে মার্কডাউন ব্যবহার করবেন না তার পরও আপনি যেকোনো টেক্সট এডিটর অ্যাপ্লিকেশান ব্যবহার করে মার্কডাউনে ফরম্যাট করা টেক্সট পড়তে পারবেন খুব সহজে।

আরেকটি মজার বিষয় যে, এইচটিএমএল এর কোড মার্কডাউনে কাজ করে । এতো এতো সুবিধা আসলে মার্কডাউনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়িয়ে দিয়েছে বা এখনো দিচ্ছে।

মার্কডাউন কিভাবে কাজ করে?

ইমেজ উৎসঃ মার্কডাউন

মার্কডাউন নিম্নক্ত ৪টি ধাপে কাজ করেঃ

প্রথমে মার্কডাউন ফাইল তৈরি করতে হবে। ফাইল ফরম্যাট হবে .md।
মার্কডাউন ফাইলটিকে মার্কডাউন অ্যাপ্লিকেশানে ওপেন করতে হবে।
মার্কডাউন অ্যাপ্লিকেশান মার্কডাউন ফাইলটিকে প্রসেস করে এইচটিএমএল ফাইলে কনভার্ট করবে।
তারপর আমরা ফাইলটিকে ব্রাউজার এ দেখতে পাবো।

তবে চিন্তার কোন কারণ নেই আমাদেরকে এত গুলো প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না। আমি এখানে মার্কডাউন লেখার জন্য Dillinger এডিটর ব্যবহার করবো। Dillinger এডিটর ব্যবহার করে আপনি একপাশে মার্কডাউন কোড লিখবেন এবং অপরপাশে আউটপুট দেখতে পাবেন। আপনি চাইলে Visual Studio Code এডিটর ব্যবহার করে মার্কডাউন কোড লিখতে পারেন।

মার্কডাউন বিস্তারিতঃ

চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে মার্কডাউন ব্যবহার করে টেক্সট ফরম্যাট করা যায়।

হেডিংঃ
আশা করি এইচটিএমএল হেডিং ট্যাগ সম্পর্কে আপনারা কমবেশি সবাই জানেন। এইচটিএমএল ফাইলে হেড ট্যাগ গুলো ব্যবহার করে আমরা টাইটেল তৈরি করতে পারি। এইচটিএমএলে আমরা H1 থেকে H6 (ক্রমান্বয়ে বড় থেকে ছোট) পর্যন্ত ৬টা ট্যাগ পাই টাইটেল লেখার জন্য। মার্কডাউন ব্যবহার করেও আমরা এইচটিএমএল এর মত হেডিং লিখতে পারি আরও সহজে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

লেখা বোল্ড বা মোটা করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে কোন লেখাকে বোল্ড বা মোটা করার জন্য লেখাটির আগে ও পরে ফাঁকা জায়গা ব্যাতিত ২টা করে এস্টেরিস্ক বা স্টার (**) চিহ্ন দিতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

লেখা ইটালিক করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে কোন লেখাকে ইটালিক করার জন্য লেখাটির আগে ও পরে ফাঁকা জায়গা ব্যাতিত ১টা করে এস্টেরিস্ক বা স্টার (*) চিহ্ন দিতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

লেখা Blockquote করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে খুব সহজে Blockquote তৈরি করা যায়। কোন লেখাকে মার্কডাউন ব্যবহার করে Blockquote করার জন্য লেখাটির আগে > এই সাইন তা দিতে হয়। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

অর্ডার লিস্ট তৈরি করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে খুব সহজে আমরা অর্ডার লিস্ট তৈরি করতে পারি। অর্ডার লিস্ট তৈরি করার জন্য প্রত্যেক লাইন এর শুরুতে নাম্বার দিতে হবে। নাম্বার ক্রমানুসারে না হলেও চলবে কিন্তু শুরুটা এক নম্বর দিয়ে হওয়া উচিত। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

আনঅর্ডার লিস্ট তৈরি করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে খুব সহজে আমরা আনঅর্ডার লিস্ট তৈরি করতে পারি। আনঅর্ডার লিস্ট তৈরি করার জন্য প্রত্যেক লাইন এর শুরুতে একটি ড্যাশ (-), এস্টেরিস্ক (*), অথবা প্লাস সাইন (+) দিলেই হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

হরাইজন্টাল রুল তৈরি করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে হরাইজন্টাল রুল তৈরি করার জন্য ৩ বা ৩ এর অধিক ড্যাশ (—), এস্টেরিস্ক (***), অথবা আন্ডারস্কোর সাইন (___) দিলেই হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

লিঙ্ক তৈরি করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে লিঙ্ক তৈরি করা খুবই সহজ। লিঙ্ক তৈরি করার জন্য তৃতীয় ব্রাকেট এর মধ্যে টেক্সট লিখতে হবে এবং প্রথম ব্রাকেটের মধ্যে URL লিখতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

ইমেজঃ
মার্কডাউনে ইমেজ ব্যবহার করা খুবই সহজ। এজন্য আমাদেরকে প্রথমে এক্সক্লামেশন মার্ক দিতে হবে, তারপর তৃতীয় ব্রাকেট এর মধ্যে ইমেজ অল্টার টেক্সট লিখতে হবে এবং প্রথম ব্রাকেটের মধ্যে ইমেজ URL লিখতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

এক লাইনে কোড লেখাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে কোন টেক্সট কে একই লাইন এ কোড হিসাবে দেখানোর জন্য লেখাটির আগে ও পরে ব্যাকটিক (`) দিতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

কোড ব্লক তৈরি করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে কোড ব্লক তৈরি করার জন্য কোডের শুরুতে ৩টা ব্যাকটিক (`) অথবা ৩টা টিলড (~~~) এবং কোড এর শেষে ৩টা ব্যাকটিক () অথবা ৩টা টিলড (~~~) দিতে হয়। আপনি চাইলে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সিনট্যাক্স হাইলাইট ফিচার চালু করতে পারেন। এই জন্য আপনাকে শুরুর দিক থেকে ৩টা ব্যাকটিক (“) অথবা ৩টা টিলড (~~~) এর পরে ল্যাঙ্গুয়েজ এর নাম লিখে দিতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

টেবিল তৈরি করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে টেবিল তৈরি করা যায় খুব সহজে। টেবিলের প্রত্যেক কলামের হেডার তৈরি করার জন্য ৩ বা ৩ এর অধিক হাইফেন (—) দিতে হবে। প্রত্যেক কলাম আলাদা করার জন্য একটা পাইপ (|) চিহ্ন দিতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

স্ট্রাইকথ্রুঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে স্ট্রাইকথ্রু তৈরি করার জন্য লেখার শুরু এবং শেষে ২টা টিলড (~~) দিতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

টাস্ক লিস্ট তৈরি করাঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে টাস্ক লিস্ট তৈরি করার জন্য লাইনের শুরুতে তৃতীয় ব্র্যাকেট এর মধ্যে ফাঁকা জায়গা রাখলে টাস্কটি আনচেক দেখাবে এবং চেক করা দেখাতে চাইলে তৃতীয় ব্র্যাকেট এর মধ্যে x লিখতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

হাইলাইট টেক্সটঃ
মার্কডাউন ব্যবহার করে হাইলাইট টেক্সট করার জন্য টেক্সট এর শুরু এবং শেষে ২টা (==) সমান চিহ্ন দিতে হবে। উদাহরণ সরূপ নিম্নের চিত্রটি দেখুন।

ইমোজিঃ
আপনি যদি মার্কডাউন ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে তেমন কিছুই করতে হবে না। যে ইমোজি ব্যবহার করতে চান শুধু ইমোজিটা কপি করে এনে মার্কডাউনে পেস্ট করতে হবে।

এখানে আমি চেষ্টা করেছি মার্কডাউন নিয়ে কাজ করতে গেলে সচারচর যে বিষয় গুলো সম্পর্কে ধারনা থাকটা জরুরী সেই বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করার। আপনি যদি মার্কডাউন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হন তাহলে মার্কডাউন এর অফিসিয়াল ডকুমেন্টেশন টা দেখতে পারেন।

Please follow and like us:
Pin Share